বর্তমান সময়ে আমাদের মোবাইল, কম্পিউটার থেকে শুরু করে প্রায় সবগুলো ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসই ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকে। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যেমন স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছে, পাশাপাশি বাড়ছে নিরাপত্তা ঝুঁকিও।

 

সাইবার নিরাপত্তা কি?

আমাদের ব্যাবহৃত কোন হার্ডওয়ার কিংবা সফটওয়্যার যেন অনাকাঙ্ক্ষিত কেউ প্রবেশ কিংবা ক্ষতিসাধন করতে না পারে, সেই বিষয়ে যে নিরাপত্তা ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয় তাকেই সাইবার নিরাপত্তা বলে।

অনেকেই ভাবেন যে, আমিতো তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি না, কিংবা আমার অনলাইনে তেমন কোন লেনদেন নেই, তাহলে আমার একাউন্টগুলো কে ই বা হ্যাক করবে? আপনি গুরুত্বপূর্ণ না হলেই যে আপনি নিরাপদ, এটি সম্পূর্ণ একটি ভুল ধারনা। সাইবার আক্রমনের স্বীকার যে কেউ যে কোন সময় হতে পারেন।

 

ঘটনা ১-

তারেক সাহেব সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন তার ফেসবুকে লগ ইন করতে পারছেন না। বিষয়টি তেমন গুরুত্ব না দিয়ে তিনি অফিসে চলে গেলেন। সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পর, সকল আত্মীয় স্বজনেরা কল দিয়ে তাঁর শারীরিক অবস্থা জানতে চাচ্ছেন। কারণ, হ্যাকার তাঁর একাউন্ট হ্যাক করে ঘনিষ্ঠ অনেককে মেসেজ দিয়েছে তারেক সাহেবের হয়ে। লিখেছে, আমি হটাৎ অফিসের কাজে ঢাকার বাইরে এসে এক্সিডেন্ট করেছি, আর্জেন্ট কিছু টাকা দরকার। এই নাম্বারে বিকাশ করে দিন। না বুঝেই অনেক আত্মীয় স্বজন অলরেডি টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে।

ঘটনা ২-

সামিয়া ফেসবুক স্ক্রোল করছিলো। হটাৎ তাঁর কাছে অপরিচিত একটি আইডি থেকে মেসেজ আসে। লেখা আছে, আপনার বান্ধবীর কিছু ছবি ভাইরাল হয়ে গেছে (সাথে একটি লিংক দেয়া)। আরো বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য সেই লিংকে বান্ধবীর একটি ছবিও দেখা যাচ্ছে। ক্লিক করার পরপরই নেটওয়ার্ক সমস্যা বা যে কোন কারনে তার ফেসবুক লগ আউট হয়ে যায় এবং আবার আইডি পাসওয়ার্ড চায়। তখন এত কিছু চিন্তা করার মত মানসিক অবস্থা তার নেই, তাই দ্রুত আইডি পাসওয়ার্ড প্রবেশ করিয়ে ভেতরে গিয়ে দেখে কিছুই নেই। কিন্তু ততক্ষনে তাঁর একাউন্টের এক্সেস চলে গেছে হ্যাকারের কাছে। এবার তারই মেসেঞ্জার থেকে ব্যাক্তিগত কিছু তথ্য নিয়ে তাকেই ব্ল্যাকমেইল শুরু করেছে হ্যাকার।

ঘটনা ৩-

অফিসের পিসিতে অনলাইন ব্রাউজ করছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা রাজিব সাহেব। ব্রেক টাইমে একটা গেমস সামনে আসলো, আর উনি কয়েক ক্লিক করে ইন্সটল করে নিলেন। এর পরপরই কম্পিউটারের সকল ফাইল লক হয়ে গেলো। একটা মেসেজ দেখা যাচ্ছে যে, এই লক খুলতে হলে টাকা দিতে হবে হ্যাকারদের। চরম বিপদে পড়েছেন তিনি। কারণ পিসির ফাইলগুলোতে রয়েছে ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ হিসাবনিকাশ। এগুলো ফেরত না পেলে চাকরিতো যাবেই, সাথে জেল জরিমানাও হতে পারে।

 

উপরে উল্লেখিত এরকম ঘটনাগুলোই ঘটে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে। তাই একটু সতর্কতাই পারে, আমাদের এই সমস্থ বিপদ থেকে কিছুটা মুক্তি দিতে। শুরুতেই বলেছিলাম, আপনি গুরুত্বপূর্ণ না হলেই যে আপনি নিরাপদ, এটি সম্পূর্ণ একটি ভুল ধারনা। হ্যাকাররা দুই ধরণের হ্যাক করে, টার্গেটেড এবং নন- টার্গেটেড।

টার্গেটেড হচ্ছে একজন নির্দিষ্ট ব্যাক্তিকে ভিক্টিম হিসেবে টার্গেট করে। এটি কঠিনতম একটা কাজ। তার ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট থেকে রিসার্চ করে কোন একভাবে তাকে ট্র্যাপড করার চেষ্টা করা হয়।

আর নন- টার্গেটেড হচ্ছে সহজতম হ্যাকিং। ম্যালওয়ার, ভাইরাস কিংবা বিভিন্ন ধরণের ট্র্যাপ অনলাইনে ছড়িয়ে দিয়ে বসে থাকা। এবার যারা যারা ফাঁদে পা দেবে, তারাই হ্যাক এর শিকার হবে। এই ধরণের ট্র্যাপে ক্ষতিগ্রস্থ হয় যাদের প্রযুক্তি জ্ঞান তুলনামূলক কম।

কিভাবে সাইবার স্পেসে নিরাপদ থাকতে পারবেন?

  • শক্ত পাসওয়ার্ড ব্যাবহার করতে হবে।
  • অপরিচিত কোন লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • অনলাইন থেকে অপরিচিত কোন অ্যাপস বা সফটওয়ার ইন্সটল করা যাবে না।
  • নিজের ব্যাক্তিগত তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা যাবে না।
  • সাইবার ক্যাফে বা পাবলিক ডিভাইসে লগ ইন করা যাবে না।
  • সাইবার সিকিউরিটির বিষয়ে জ্ঞান বৃদ্ধি করতে হবে।
  • যে কোন সাইবার ক্রাইমের শিকার হলে দ্রুত পুলিশের সাইবার টিমকে অবগত করতে হবে।

 

নিরাপদ একটি সাইবার স্পেস সকলেরই কাম্য। তাই সচেতনতা বৃদ্ধিই পারে নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে সকল সাইবার ক্রাইমের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে।