জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে আমরা প্রায়ই ভোগান্তির স্বীকার হই। তাই, আজকের এই পোস্টে আমরা চেষ্টা করেছি এনআইডির বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে।
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন
অফলাইন কিংবা অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার নিয়ম আমরা অনেকেই জানিনা। পরিচিত বা অপরিচিত বিভিন্ন মাধ্যমে ভোটার তালিকায় নিবন্ধন করায় প্রায়ই তথ্যগত ভূল আসে। নামের বানান, পিতার নাম, মাতার নাম, জন্ম তারিখ সহ আরো অনেক তথ্যই আমাদের পরিবর্তন করার প্রয়োজন পড়ে। নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে ফর্ম সংগ্রহ করে পুরন করে এই তথ্যগত ভূলগুলোর সমাধান করা যায়। আবার অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের বিশেষ সুযোগ রয়েছে। এনআইডি পোর্টালে লগিন করে বিকাশ/রকেট ইত্যাদির মাধ্যমে পেমেন্ট করে সহজেই এই আবেদন করতে পারবেন।
আমাদের প্রায়ই বিভিন্ন ডকুমেন্টে ভুল আসে। টাইপিং মিসটেক খুবই কমন একটি ইস্যু। অনেক সময় আমরা নিজেরাই আবেদন করার সময় ভুল করি। অনেক সময় আবার আমরা নিজেরা ঠিকঠাক লিখে আবেদন করলেও কতৃপক্ষের গাফেলতির কারনে সাধারণ জনগনকেই ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়। ভূল যে কারনেই হোক না কেন, তার সমাধান করতে রয়েছে সুদীর্ঘ ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। সেই প্রক্রিয়াগুলো অনুসরন করেই আমাদর এই ভুলগুলো সমাধান করে নিতে হয়।
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফি জমা দেওয়ার নিয়ম
প্রথমেই এনআইডি পোর্টালে লগিন করে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন অনলাইন আবেদন করতে হবে। এখানেই ধাপে ধাপে বিস্তারিত গাইডলাইন দেয়া আছে। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফরম ডাউনলোড করে পূরণ করতে পারেন। নাম সংশোধন, পিতার নাম সংশোধন, মাতার নাম সংশোধন, ঠিকানা সংশোধন, জন্ম তারিখ সংশোধন, ছবি পরিবর্তন ইত্যাদির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
অনলাইনে পেমেন্ট করার অনেকগুলো পদ্ধতি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসগুলো রয়েছে সবার হাতের মুঠোয়। তাই যে কোন অনলাইন সেবায়ই সকলে চায় তার হাতে থাকা পেমেন্ট সিস্টেম ব্যাবহার করতে। বেসরকারি সকল সার্ভিসের সাথে পাল্লা দিয়ে বর্তমানে সরকারি সেবাগুলোতেও রয়েছে মাল্টিপল পেমেন্ট গেটওয়ে সুবিধা, যা আমাদের কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছে।
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন অনলাইন আবেদন করতে যা যা লাগে
- শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদ
- জন্ম নিবন্ধন
- পাসপোর্ট (যদি থাকে)
- ড্রাইভিং লাইসেন্স (যদি থাকে)
- পিতা/মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র
- গ্যাস / বিদ্যুৎ বিলের কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
অনলাইনে আবেদন করার পর ফী পেমেন্ট করে নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা করতে হয়। সংশোধন হয়ে গেলে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে জানতে পারবেন। তখনি নিকটস্থ নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে সংশোধিত কপি সংগ্রহ করে নিতে পারবেন।
মূলত সংশোধন করে যে নামে নিতে চাচ্ছেন, সেটিই যে আপনার প্রকত নাম, তা কতৃপক্ষ নিশ্চিত হওয়ার জন্যই এগুলো সাপোর্টিং ডকুমেন্ট হিসেবে ব্যাবহার করে।
জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই
অফিস আদালতের, কিংবা ব্যাংকের বিভিন্ন কাজে আমাদের প্রায়ই জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই/verification কপি প্রয়োজন হয়। অনলাইন থেকে এই কপি সংগ্রহ সংগ্রহ করা অনেক সময় আমাদের কাছে কঠিন মনে হয়। অথচ এই অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই পদ্ধতি খুবই সহজ। জাতীয় পরিচয়পত্র অনলাইনে চেক করার জন্য আপনার শুধুমাত্র দুইটি তথ্য প্রয়োজন। এনআইডি নাম্বার এবং জন্ম তারিখ। পোর্টালে আপনার আইডি নাম্বার / ফর্ম নাম্বার লিখে সাথে জন্ম তারিখ সিলেক্ট করে ক্যাপচা কোড টাইপ করলেই আপনার যাচাই/verification কপি পেয়ে যাবেন। সেখান থেকেই চাইলেই প্রিন্ট দিয়ে নিতে পারবেন, অথবা পিডিএফ ফাইলও ডাউনলোড করতে পারবেন।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনলাইনে দেখার নিয়ম
আপনি যদি অলরেডি এনআইডি হাতে পেয়ে থাকেন, তাহলে জাতীয় পরিচয় পত্র অনুসন্ধান করতে পারবেন এর নাম্বার দিয়ে। আর যদি না ও পেয়ে থাকেন, তবুও জাতীয় পরিচয়পত্র অনলাইনে দেখার নিয়ম একই। জাস্ট আইডি নাম্বারের জায়গায় ফর্ম নাম্বার দিয়ে দেখতে হবে।
আমরা চাকরি, ব্যাবসা সহ বিভিন্ন কাজেই এখন এনআইডি কপি সংযুক্ত করি। আর তাই এই কপি ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। কম্পিউটার দোকান থেকে ফটো এডিটিং করে চাইলেই অল্প সময়ে তৈরি করে নেয়া যায় ভুয়া আইডি কার্ড। আর এই সমস্যা থেকে বাচতেই সকলের জন্য উন্মুক্ত যাচাই পদ্ধতি তৈরি করা হয়েছে। যখনি কেউ কোথাও এনআইডি কপি সাবমিট করবে। তারা চাইলে মুহূর্তেই সেটি অনলাইনে যাচাই করে তার সত্যতা নিশ্চিত হতে পারবে। এতে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসবে।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনলাইন কপি ডাউনলোড
এখন জাতীয় পরিচয়পত্র অনলাইন কপি বের করার নিয়ম খুবই সহজ। nid online copy download বা অনলাইন কপি পাওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে আপনাকে ভোটার তালিকায় নিবন্ধিত হতে হবে। এছাড়াও ছবি তোলা, ফিংগারপ্রিন্ট দেয়া এবং চোখের আইরিশ স্ক্যান করা, এই ধাপগুলো সম্পন্ন করা থাকতে হবে। এই ধাপগুলো সম্পন্ন হলেই যে, আপনি জাতীয় পরিচয়পত্র অনলাইন কপি ডাউনলোড করতে পারবেন, তা কিন্তু নয়। নির্বাচন কমিশন এজেন্টের মাধ্যমে এই তথ্যগুলো এনআইডি সার্ভারে আপলোড হতে হবে।
অনলাইন থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র কিভাবে উঠাবেন
জাতীয় পরিচয় পত্র আবেদন করার কিছুদিন পর আপনি নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে লগিন করার চেষ্টা করবেন। এখানে আপনার মোবাইল নাম্বার দিয়ে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড নাম্বার ইত্যাদি সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে। আপনার প্রদত্ত nid card apply online এর সকল তথ্য নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে থাকা তথ্যের সাথে সম্পূর্ণ মিলেই গেলেই শুধুমাত্র আপনি জাতীয় পরিচয়পত্র একাউন্ট তৈরি করতে পারবেন।
এখানে আপনি আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর সহ সকল তথ্য পাবেন। যেহেতু স্মার্টকার্ড তৈরি হতে প্রায়ই অনেক সময় লাগে, তাই এখান থেকে আপনি সাময়িক কপি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
জাতীয় পরিচয় পত্র কিভাবে ডাউনলোড করব
অনলাইন কপি আপনি আপনার পোর্টাল একাউন্ট থেকে যে কোন সময়য় ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। এই কপিটি আপনি স্মার্টকার্ড হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত সকল কাজে ব্যাবহার করতে পারবেন। পূর্বে অনলাইন কপিতে ১১ অথবা ১৫ ডিজিট নাম্বার দেয়া থাকলেও বর্তমানে এতে স্মার্ট কার্ডের যে নাম্বার হবে, সেটিই দেয়া থাকে।
অনলাইন থেকে ডাউনলোড (nid card download) করে নেয়া কপি যে কোন কম্পিউটার দোকান থেকে প্রিন্ট করে লেমিনেটিং করে নেয়া যায় চাইলেই। আর এই কপি সব সময় নিজের সাথে ক্যারি করাও সম্ভব।
জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে করণীয়
আমরা অনেক সময় জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে বের করার নিয়ম জানা না থাকায় বিপদে পড়ে যাই। অরিজিনাল এনআইডি কপি বিভিন্ন কাজে আমরা নিজের সাথে বহন করি। তাই সম্ভাবনা থাকে সহজেই তা হারিয়ে যাওয়ার। এছাড়াও বাসা পরিবর্তন, চুরি হওয়া ইত্যাদি কারনেই এনআইডি কার্ড মিসিং হতে পারে।
আজকে আমরা জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে কিভাবে উঠানো হয় সে বিষয়ে জানার চেষ্টা করবো। এনআইডি হারিয়ে গেলে প্রথম কাজ হচ্ছে নিকটস্থ থানায় একটি জিডি করা। এছাড়াও আপনি চাইলে অনলাইনে জিডি করতে পারবেন। সেই জিডির কপি সংযুক্ত করে আপনার নিকটস্থ নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে আবেদন করতে পারেন। এছাড়াও অনলাইনে সহজেই আবেদন করে নির্দিষ্ট ফী জমা দিয়ে সংগ্রহ করে নিতে পারেন নতুন কপি।
যে কোন গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট হারিয়ে গেলে ফেসবুকের গ্রুপগুলোতে পোস্ট দিয়েও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। প্রায়ই দেখা যায় গ্রুপ পোস্ট দেখে অনেকে খুজে পাওয়া ডকুমেন্ট তার আসল মালিকের কাছে ফেরত দিয়েছে