ফেসবুকে বুস্ট নাকি গুগলে এসইও – বর্তমান সময়ে যে কোন ব্যাবসার প্রচারেই ডিজিটাল মার্কেটিং এর জয়জয়কার। আর এই ডিজিটাল মার্কেটিং এর অনেক অনেক পদ্ধতি মার্কেটে প্রচলিত রয়েছে। ফেসবুকে বুস্টিং, গুগলে এসইও, ইউটিউব মার্কেটিং, ইমেইল মার্কেটিং, এসএমএস মার্কেটিং, এড মিডিয়া সহ অনেক পদ্ধতিতে অনলাইনে নিজের পন্য বা সেবার বিজ্ঞাপন প্রচার করা যায়।

আমরা যারা আইটি পেশায় আছি, তারা ব্যাবসার ধরন অনুযায়ী কার জন্য কোন মার্কেটিং রুটম্যাপ ধরে ফেসবুকে বুস্ট নাকি গুগলে এসইও ভালো হবে তার সাজেশন দিয়ে থাকি। কিন্তু সাধারণের জন্য বিশেষ করে যারা নতুনভাবে অনলাইন ব্যাবসায় আসছেন, তাদের জন্য এটা বোঝা কিছুটা কঠিন। 

আজকের আলোচনাতে তাই আমরা বর্তমান সময়ে সবচেয়ে প্রচলিত দুইটি পদ্ধতির তুলনামূলক আলোচনা করবো যেন আপনার সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয়। 

ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর তুলনা

ট্রেডিশনাল বা অফলাইন মার্কেটিং হচ্ছে আমাদের বাবা দাদাদের আমল থেকে চলে আসা ব্যাবসার সনাতন পদ্ধতি। ব্যানার, পোষ্টার, লিফলেট, দেয়ালে চিকা ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা আমদের ব্যাবসা সম্পর্কে আশেপাশের সকলকে জানান দিয়ে থাকি। এছাড়াও পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, টিভিতে বিজ্ঞাপন ইত্যাদিও ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এর মধ্যেই ধরা হয়, যদিও এর কিছুটা এখন অনলাইন প্লাটফর্ম এ চলে এসেছে

ডিজিটাল মার্কেটিং বা অনলাইন মার্কেটিং হচ্ছে চরম জনপ্রিয় প্রচার মাধ্যম। এই মাধ্যমে খুব সল্প খরচে অনেক বেশী সম্ভাব্য ক্রেতার কাছে আপনার পন্য বা সেবার তথ্য পৌঁছে দেয়া যায়। ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এ যেখানে সবাইকে বিজ্ঞাপন দেখানো হয়, যার প্রয়োজন আছে, তাকেও, আবার যার প্রয়োজন নেই তাকেও। অন্যদিকে ডিজিটাল মার্কেটিং এ রয়েছে অডিয়েন্স টার্গেট করে ক্যাম্পেইন চালানোর সুযোগ। অর্থাৎ যার আপনার পন্য বা সেবা প্রয়োজন হতে পারে শুধু তাকেই আপনি দেখাবেন। 

ফেসবুকে বুস্ট করা কেন প্রয়োজন?

বর্তমানে খুব জনপ্রিয় একটি সোশ্যাল মিডিয়া হচ্ছে ফেসবুক। ছেলে থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সকলের দিনের একটা বড় অংশ আমরা ফেসবুকে ব্যয় করি। তাই অন্য যে কোন মাধ্যম থেকে ফেসবুকেই আপনার সম্ভাব্য ক্রেতার আনাগোনা বেশি, এটাও ধরেই নেয়া যায়। 

গুগলে এসইও করা কেন প্রয়োজন? 

গুগল সার্চ করে যে কেউ তার প্রয়োজনীয় পন্য বা সেবার তথ্য খুজে বের করে। তাই গুগলে সার্চ করে যদি আপনার ওয়েবসাইট সহজে পাওয়া যায়, তাহলে যে কোন ক্রেতাই সহজে আপনার সেবাটি নিতে পারে। আপনার উপর আস্থাও আসে। 

উদাহরনঃ ধরুন ফেসবুকে আপনি ১০০০ টাকা ফেসবুক বুস্টিং খরচ করে ১০ হাজার ইউজারকে আপনার বিজ্ঞাপন দেখালেন। অডিয়েন্স টার্গেট করে যার আপনার সেবাটি দরকার হতে পারে তাকেই দেখালেন। আপনার পন্য খাতা কলম, আপনি সব স্কুল কলেজের ছাত্রদের দেখালেন বিজ্ঞাপন। কিন্তু যে ফেসবুকে রোমান্টিক কবিতা পড়ছে সে পাশে খাতা কলমের বিজ্ঞাপন দেখলেই কিনবে এমন কিন্তু না। 

অন্যদিকে একই ১০০০ টাকা খরচ করে আপনি গুগল থেকে ১০০ জন ট্রাফিক পেলেন। কিন্তু এই ১০০ জন গুগলে সার্চ করেছে খাতা বা কলম কেনার জন্য। অর্থাৎ আপনার পন্য / সেবা তাকেই দেখাচ্ছেন ঠিক যার দরকার। তাহলে আপনার সেল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী। 

 

ফেসবুকে বুস্ট নাকি গুগলে এসইও করবেন

 

বিষয় ফেসবুক বুস্ট গুগল এসইও
ওয়েবসাইট লাগে না লাগে
রেজাল্ট তাৎক্ষনিক আসে অনেক ধীরেসুস্থে আসে
বাজেট অল্প বাজেটেই করা যায় বেশী বাজেট লাগে
স্থায়িত্ব সল্প সময় স্থায়ী হয় দীর্ঘস্থায়ী হয়
টেকনিক্যাল স্কিল তুলনামূলক কম লাগে তুলনামূলক বেশী লাগে
কাদের জন্য ভালো স্টার্টআপ কোম্পানীর জন্য কম্পিটেটিভ কোম্পানির জন্য

 

নোটঃ এই তুলনাটি সাময়িক সিদ্ধান্তের জন্য যে আপনি ফেসবুকে বুস্ট নাকি গুগলে এসইও কোনটি আগে শুরু করবে। দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা এবং ব্যাবসাকে স্টাবলিসড করার জন্য আপনাকে অবশ্যই দুইটিই করতেই হবে। এবং এগুলর পাশাপাশী অন্যন্য ডিজিটাল মার্কেটিং মাধ্যমগুলোতে সময়, শ্রম, অর্থ সবই বিনিয়োগ করতে হবে। 

 

ফেসবুক বুস্ট হচ্ছে মোটর সাইকেল এবং এসইও হচ্ছে সাইকেল। মোটর সাইকেল দিয়ে অনেক দ্রুত যেতে পারবেন কিন্তু তেল শেষ তো আপনার অগ্রগতিও শেষ। আবার সাইকেল দিয়ে আপনি অনেক পথ যেতে পারবেন কোন তেল ছাড়া। এখানেও আপনার খরচ হবে। কিন্তু কিছুক্ষন প্যাডেল মারলে আবার কিছুটা পথ আপনা আপনি চলবে। 

 

ফেসবুকে বুস্ট নাকি গুগলে এসইও – কোন ডিজিটাল মার্কেটিং আগে করবেন? 

  1. ফেসবুক বুস্ট
  2. ওয়েবসাইট এসইও
  3. ইউটিউব মার্কেটিং / ভিডিও মার্কেটিং
  4. লিড জেনারেশন
  5. ইমেইল মার্কেটিং
  6. এসএমএস মার্কেটিং
  7. গুগল এডস

ডিজিটাল মার্কেটিং সেবা কোন কোম্পানি থেকে নেবেন?

বর্তমানে বাংলাদেশে অনেকগুলো ভুঁইফোঁড় ডিজিটাল মার্কেটিং কোম্পানি তৈরি হয়েছে যারা খুব অল্প টাকায় ডিজিটাল মার্কেটিং (marketing facebook boost) এর কাজ নিয়ে থাকে। আপনার একটি বিজ্ঞাপন ডিজাইন করে তা ফেসবুক বুস্টিং করে আপনাকে ২-৪ জন ক্রেতা এনে দিয়েই কাজ সম্পন্ন করে।

অথচ হওয়া উচিৎ ছিলো এমন যে, ডিজিটাল মার্কেটিং কোম্পানি আপনার পন্য বা সেবা নিয়ে রিসার্চ করবে। আপনার কাস্টমার চ্যানেল কারা? সেই অনুপাতে ডিজাইন করবে। নারীরা আপনার ক্রেতা হলে তারা কেমন কালার / ডিজাইন পছন্দ করে, বাচ্চারা ক্রেতা হলে তারা কেমন কালার / ডিজাইন পছন্দ করে এগুলো নিয়ে গবেষণা করে আপনার বিজ্ঞাপন ডিজাইন করবে।

মার্কেটিং ক্যাম্পেইনে কোন কথাটি লিখলে আপনার সম্ভাব্য ক্রেতা আকৃষ্ট হতে পারে সে অনুপাতে কন্টেন্ট তৈরি করবে। 

আমি ছোট একটি গল্প দিয়ে শেষ করবো আজকের এই লেখা,

একটি কোম্পানী মেয়েদের কসমেটিক পণ্য নিয়ে ব্যাবসা করতো। অনেক ভাবে প্রচার প্রচারণা চালিয়েও তারা কোন ভাবেই সফল হতে পারেন নি। তখন তারা একটি নামকরা ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সির শরণাপন্ন হল। সেই এজেন্সির নিয়ম আবার খুব অদ্ভুত। তাদের পরামর্শ ফী ১০০০ ডলার আর মার্কেটিং করার ফী ১০০ ডলার। 

সেই ব্যাবসায়ী ভাবলেন, ১০০ ডলার দিয়েতো অনেক জায়গাতেই মার্কেটিং করলাম, লাভ হলো না কোনই। এবার ১০০০ ডলার পরামর্শ ফী দিয়েই দেখি কি হয়। 

তো সেই মার্কেটিং এজেন্সি তাদের পন্যের ক্রেতা অর্থাৎ ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী মেয়েদের সাইকোলোজি রিসার্চ করে দেখলো যে, এই বয়সী মেয়েরা একটু হিংসুক প্রকৃতির থাকে সাধারণত। মানে তারা সমবয়সী অন্য মেয়েদের কিছুটা হিংসা করে। 

তখন তারা বিজ্ঞাপন ডিজাইন এভাবে করলো যে,  আপনার জন্য একটি ডিসকাউন্ট অফার আছে। তার নিচে, দুইটি বাটন রয়েছে। তার মধ্যে, একটিতে লেখা Accept offer এবং অন্যটিতে লেখা Pass this offer to another girl । এখন, যে কোন মেয়ের সামনে যখন এই বিজ্ঞাপনটি পড়ে, তখনি সে চিন্তা করে যে, আরে আমার অফার আরেকটা মেয়ে নিয়ে যাবে? না না, এটা হতে দেয়া যাবে না, আমিই নেবো এই অফার। এই বিজ্ঞাপন প্রচার করার সাথে সাথে কোম্পানিটির সেল অনেক গুন বেড়ে গেলো।

 

অনেক সময় ধরে ধৈর্য নিয়ে আমার এই লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ফেসবুকে বুস্ট নাকি গুগলে এসইও, ডিজিটাল মার্কেটিং এর যে কোন সেবার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।