পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট কি?

বর্তমানে আমাদের দেশের যুব সমাজ ফ্রিল্যান্সিং কাজ কর্ম হিসাবে বেঁছে নিয়েছে। এই ফ্রিল্যান্সিং কাজ করতে হয় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ক্লায়েন্ট এর সাথে। যার ফলে ক্লায়েন্টের সাথে অর্থ আদান প্রদান করার জন্য ইন্টারন্যাশনাল একটা পেমেন্ট গেটওয়ের প্রয়োজন হয়। আর পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট হচ্ছে সেই গেটওয়ে বা মাধ্যম।

পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট হচ্ছে একটি ক্রস বর্ডার পেমেন্ট সলিউশন। এটা এমন একটি উপায় যা ব্যাবহার করে আপনি দেশের বাইরে থেকে আপনার কাজের পেমেন্ট আনতে পারবেন। সেটা হতে পারে কোন মার্কেটপ্লেস থেকে অথবা সরাসরি কোন ক্লায়েন্টের কাছে থেকে। এই ক্ষেত্রে আপনার ক্লায়েন্ট কোন প্রতিষ্ঠানও হতে পারে আবার কোন ব্যাক্তিও হতে পারে।

অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা আসুবিধা

পেওনিয়া অ্যাকাউন্ট এর সুবিধা হচ্ছে যে যারা দেশের বাহিরে কাজ করে পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট দিয়ে তারা পেমেন্ট নিতে পারে। কিন্তু যারা ফ্রিলাইন্সার না আর বিদেশ থেকে কোন ধরণের উপার্জন করার রাস্তা নেই তাদের জন্য পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট কোন কাজের না। কিন্তু যারা বিদেশি ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করে তাদের জন্য পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট থাকাটা অনেক গুরুতপূর্ণ। কারণ পেওনিয়ার টাকা আদান প্রদানের করার একটি ফাস্ট মাধ্যম।

আবার পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট ব্যাবহারের আরেকটি অসুবিধা হচ্ছে যে এই অ্যাকাউন্ট টি ব্যাবহার করে শুধু মাত্র কাজের পেমেন্টই আনা যায়, অন্য কোন ধরনের পেমেন্ট আনা যায় না। আবার যারা ১৮ বছর এর নিচে তারা এই অ্যাকাউন্টটি খুলতে পারবে না। কারণ এই অ্যাকাউন্ট টি খোলার জন্য দরকার হচ্ছে ন্যাশনাল আইডি কার্ড।

তাই যাদের কাছে জাতীয় পরিচয় পত্র নেই তারা পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে না। আর এখন পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট দিয়ে আমরা বিকাশেও টাকা উত্তোলন করতে পারবো এই টাকার পরিমাণ হতে হবে সর্বনিন্মে ১০০০ টাকা এবং ব্যাংকে উত্তোলন করার সময় এই টাকার পরিমাণ সর্বনিন্মে হতে হবে ১৫০ ডলার এর উপরে।

ফাইভার কি ও কিভাবে ফাইভারে আপনি একটি সেলার অ্যাকাউন্ট খুলবেন। – Kazi Nishat IT

মার্কেটপ্লেসে কাজ করার জন্য কি একটি পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট জরুরী

হ্যাঁ মার্কেটপ্লেসে কাজ করার জন্য পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট একটি গুরুতপূর্ণ মাধ্যম। কারণ আপনি যখন দেশের ভিতরে কাজ করবেন তখন সেই পেইমেন্টটা নিতে বা দিতে কোন ধরনের অসুবিধা হবে না। কিন্তু যখন সেই একই কাজ আপনি কোন বাহিরের দেশের লোকের সাথে করবেন তখন সেখান থেকে পেমেন্টটা আনতে অথবা দিতে আপনার অনেক অসুবিধা হবে।

তাই যেসকল লোকরা ফ্রিলাইন্সিং করে তাদের টাকা আদান-প্রদানের জন্য প্রথম চয়েস হচ্ছে পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট। এটা যে শুধু টাকা আদান-প্রদান করে এর জন্যই নয় বরং এটি দ্বারা আমারা আমাদের চয়েস অনুযায়ী বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে বিভিন্ন ধরণের জিনিস ক্রয় ও বিক্রয় করতে পারি। তাই অনেকই এই পেইমেন্ট মেথডটা পছন্দ করে।

পেওনিয়ার নিয়ে আপনার ভুল ধারনা

আমাদের মধ্যে অনেকেই ধারণা করে যে Payoneer অনেক টাকা বাৎসরিক চার্জ হিসাবে কাটে। কিন্তু এই কথাটি পুরোপুরি সত্য না। কারণ আপনি যদি পেওনিয়ার এর মাস্টার কার্ডটি না নেন তাহলে আপনাকে কোন বাৎসরিক চার্জ দিতে হবে না।

আর আপনি মাস্টার কার্ড না নিয়েও পেওনিয়ার এর মাধ্যমে ব্যাংকে লেনদেন করতে পারবেন। আবার আপনি চাইলে রেজিস্টার করার পর যেকোনো সময় কার্ডের জন্যে অর্ডার করতে পারবেন। এই জন্যে আপনাকে বছরে প্রায় ২৫-৩০ ডলারের মত চার্জ দিতে হবে।

অ্যাকাউন্ট খোলার আগে যেসকল বিষয় জানা জরুরী

  • আপনার নিজের নামে পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট জীবনে শুধু একবারই খুলতে পারবেন, তাই কোন ধরণের ভুল ইনফরমেশন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
  • পেওনিয়ার অ্যাকাউন্টে বা যেকোন মার্কেট প্লেসের অ্যাকাউন্টের সিকিউরিটি প্রশ্ন এবং উত্তর ভুলে গেলে বিপদে পড়বেন।
  • আবার ও বলছি পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট আপনার জন্য অত্যান্ত জরুরী যদি আপনি অনলাইনে প্রফেশনাল হতে চান।
  • পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট যে নামে খুলবেন ঠিক সেই নামের ব্যাংক একাউন্ট এবং ন্যাশনাল আইডি কার্ড থাকতে হবে।
  • পেওনিয়ার রিসেন্টলি কারো কারো কাছে একাউন্ট ভেরিফিকেশনের জন্য পাসপোর্ট এর ফটোকপি অথবা স্ক্যানকপি চায়, সেক্ষেত্রে আপনার পাসপোর্ট থাকলে ভেরিফিকেসনের জন্য সুবিধা হবে।
  • পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট খুলতে আমাদেরকে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য, সিকিউরিটি ডিটেইলস, পেমেন্ট মেথড, ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য প্রদান করতে হবে। ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সাথে মিল রেখে সকল তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করা বাধ্যতামূলক। ভেরিফিকেশনের জন্য ফোন নাম্বার ও ইমেইল এড্রেস প্রদান করতে হবে।
  • পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট খুলার জন্য অবশ্যই ১৮ বছরের হতে হবে।

সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার উপায় – Kazi Nishat IT

পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট কিভাবে খুলতে হয়

এখন আমরা জানবো পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে। পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া কিছুটা দীর্ঘ হওয়ার কারণে সেকশন আকারে একাউন্ট খোলার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

এখন আমরা পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য সবার আগে পেওনিয়ার এর ওয়েবসাইটে যাবো। তারপর আমারা রেজিস্ট্রেশন পেজে প্রবেশ করবো।

এরপর আপনি কি পেশায় আছেন তা জানতে চাওয়া হবে। ফ্রিল্যান্সার, এজেন্সি, সার্ভিস প্রোভাইডার, ইত্যাদি অপশন প্রদান করা হবে। প্রদর্শিত কোনো পেশা আপনার সাথে না মিললে সেক্ষেত্রে “ব্যক্তি” সিলেক্ট করেও আপানর পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে।

তারপরে কোন কাজের জন্য পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন, তা জানতে চাওয়া হবে (“I am looking to get payment by my international clients or my freelancing marketplaces” & “Also pay my service providers and suppliers”) অপশন থেকে যেটি আপনার দরকার সেটি সিলেক্ট করুন। এরপর আপনার মাসিক আয়ের পরিমাণ সিলেক্ট করুন ও রেজিস্টর অপশনে ক্লিক করুন।

তারপরে আপনিকি “Individual” অথবা “Company” হিসেবে পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন তা জিজ্ঞেসা করা হবে। সামনে দেয়া অপশন গুলো থেকে আপনার মনমত অপশনটি বাছাই করুন। আপনি যদি “Company” সিলেক্ট করে থাকেন তাহলে আপানাকে আপনার কোম্পানির বিভিন্ন অফিসিয়াল তথ্য দিতে হবে।

এরপর আসবে ব্যক্তিগত তথ্য পূরণের পালা। সরকার কতৃক ইস্যুকৃত কোনো আইডি, যেমনঃ এনআইডি বা পাসপোর্ট এর সাথে মিল রেখে নাম, জন্মতারিখ, ইমেইল এড্রেস, ইত্যাদি তথ্য পূরণ করুন। এরপর পরবর্তী স্ক্রিনে আপনার দেশ, ঠিকানা, শহর, পোস্টাল কোড প্রদান করতে বলা হবে।

সেরা ওয়েব হোস্টিং কিভাবে চিনবেন? – Kazi Nishat IT

এরপর আসবে মোবাইল ভেরিফিকেশনের পালা। বর্তমানে সচল আছে আপনার এমন একটি মোবাইল নাম্বার দিতে হবে। উল্লেখ্য যে এই নাম্বারটি পরবর্তীতে পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে বা কোনো তথ্য আপডেট করতে কাজে আসবে। মোবাইল নাম্বারটি দেওয়ার পরে মোবাইলে একটি ভেরিফিকেশন কোড আসবে যা এসএমএস আসার ৩০সেকেন্ডের মধ্যে পূরণ করতে হবে। ওটিপি কোড পূরণ করে “Next” অপশনে ক্লিক করুন।

পরের পেজে সিকিউরিটি ডিটেইলস পূরণ করতে হবে। প্রথমে পেওনিয়ার একাউন্টের একটি পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে। এরপর আপনার আইডেন্টিটির ডকুমেন্ট হিসেবে ন্যাশনাল আইডি কার্ড, পাসপোর্ট বা ড্রাইভার লাইসেন্স প্রদান করুন। আপনার স্থানীয় নাম, অর্থাৎ বাংলা ভাষায় নাম প্রদান করুন। ক্যাপচা পূরণ করে “Next” এ ক্লিক করুন।

পেওনিয়ার একাউন্টে থাকা অর্থ ব্যাংক থেকে তুলতে হলে অবশ্যই ব্যাংক ডিটেইলস প্রদান করতে হবে। আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ধরণ, ব্যাংকের নাম, অ্যাকাউন্টের নাম ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বার দিতে হবে। এরপর শর্তসমূহে রাজি প্রকাশ করতে “Agree” ও এরপর “Submit” বাটনে ক্লিক করুন। তাহলেই আপনার পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে যাবে।